Number of innovations would we stay on this site soon --- Number of innovations would we stay on this site soon.

Thursday, February 9, 2012

ফুলের গ্রাম সাবদি



সাবদি, একটি গ্রামের নাম। এ গ্রামের আশপাশের সব জমি ও বাড়ির আঙিনায় হরেক রকমের ফুলের বাগান। সাবদি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে কেউ পা রাখলেই বিস্মিত হয়ে ওঠে। গ্রামগুলোকে ঘিরে শুধু বাগান আর বাগান। কয়েক বর্গমাইল এলাকাব্যাপী কাঠমালতি ফুলের গুচ্ছ গুচ্ছ বাগান। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে গ্রামগুলোর রাস্তার দু’ধারে হাজারো কাঠমালতির সারি সারি বাগান। সারা গ্রামের সব জমিতে ফুল আর ফুল। ফুলের সাম্রাজ্য দেখা মেলে সাবদি, দিঘলদী, সেলশারদী, মাধবপাশা, আইছতলাসহ কয়েকটি গ্রামে। এসব গ্রামে কাঠমালতি, গাঁদা, বেলী ও জিপসি ফুলের বাগান করে শতাধিক মানুষের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তাই সাবদি ও দিঘলদী গ্রামকে এখন সারাদেশে ফুলের গ্রাম নামে পরিচিত।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদি, দিঘলদী গ্রামের অবস্থান। গ্রামগুলোর পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের পশ্চিম ধারে সারি সারি কাঠমালতির বাগান। ফুলের চাষাবাদ করে এ এলাকার লোকজন তাদের ভাগ্যের চাকার পরিবর্তন করেছে। বদলে গেছে এ গ্রামের সব দৃশ্যপট। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা শান্ত পরিবেশের গ্রামগুলোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬-৭ হাজার লোক জড়িত আছে ফুলবিষয়ক বাণিজ্যে। তারা ফুল উৎপাদন, ফুলের মালা তৈরি ও ফুল বিক্রিতে সরাসরি জড়িত আছেন। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ফুল ঢাকা শাহবাগ ও চট্টগ্রামের ফুলের আড়তে যায়।
জানা গেছে, দিঘলদী গ্রামের বেকার যুবক সুধেব চন্দ্র দাস প্রথম এ গ্রামে ফুলের চাষ শুরু করেন। পরে আরও কয়েকজন বেকার যুবক ওই গ্রামে সুধেবের দেখাদেখি ফুলের চাষাবাদ করেন। ওই গ্রামের রহমতউলাহ ১৯৯২ সালে ডেমরার বাওয়া জুট মিলের চাকরি চলে যাওয়ার পর তিনি ঢাকায় ফেরি ফুলের ব্যবসা শুরু করেন। পরে ওই গ্রামের অপর ফুল ব্যবসায়ী মোতালেবের উৎসাহে ১৯৯৫ সালে তিনি গ্রামে এসে বাৎসরিক ইজারা ভিত্তিতে অন্যের জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে রহমতউলাহ ফুল চাষ করে নিজে ১০ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। রহমতউলাহর মতো ওই গ্রামের ইসমাইল, আবদুল মান্নান, জাকির, ইকবাল, নকুল চন্দ্র হালদার, শরীফ, আবদুল বাতেন, মোস্তফা, সিরাজ, জহির, সিদ্দিক, ইউসুফ, মনিরসহ প্রায় দু’শতাধিক লোক কাঠমালতি, গাঁদা, জিপসি ও বেলী ফুলের চাষ করছেন। এ ফুল চাষ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও প্রায় ১ হাজার শ্রমিকের জীবিকা। এ ফুল চাষে পুরুষের পাশাপাশি মহিলা ও স্কুলপড়য়া শিক্ষার্থীরা জড়িত রয়েছে। তারা প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঠমালতির ফুল বাগানে কলি আহরণের উদ্দেশ্যে যায়। সাংসারিক সুখ-দুঃখের আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে ডালা ভরে ফুলকলি তুলে যার যার বাড়িতে ফিরে আসে। কাঠমালতির ফুল দিয়ে ‘গাজরা’ ও ফুল কলির লহর বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সাবদি, দিঘলদীসহ ওই এলাকার মহিলারা। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও সকাল ৯টা পর্যন্ত কলি তুলে স্কুলে যায়। তারা আবার বিকালে বাড়ি ফিরে ফুলের লহর বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে ফুলচাষীরা বাগান থেকে তুলে আনা ফুল বাড়ির আঙিনায় মালা গেঁথে সেগুলো সন্ধ্যায় সাবদি বাজারে নিয়ে জড়ো করে। সাবদি বাজার থেকে ট্রাকে করে পাইকাররা প্রতিরাতে এসব ফুল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য। তিন ধাপে কাঠমালতি ফুল বাজারজাত হয়। প্রথম ধাপে বাগান করা, দ্বিতীয় ধাপে ফুল ক্রয় করা এবং তৃতীয় ধাপে তা শাহবাগে এবং চট্টগ্রামের ফুলের হাটে কাঠমালতির ফুলকলি বাজারজাত করা হয়।
বাসর ঘরে সাজানোর জন্য এবং বিভিন্ন পূজা-অর্চনায় কাঠমালতি ফুলকলির ব্যাপক চাহিদা আছে বাজারে। তাছাড়া বর্তমানে আধুনিক তরুণীদের খোঁপায় কাঠমালতির ফুলকলির ‘গাজরার’ ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। ফুলচাষীরা জানান, এ গ্রামের মানুষ ফুল চাষ করে তাদের পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে দিয়েছে। গ্রামের সবাই এখন স্বাবলম্বী। এ গ্রামের অনেকেই আছেন, যারা প্রায় ২ যুগের অধিককাল ধরে কাঠমালতি ফুলকলির ব্যবসা করছেন।

0 comments:

Post a Comment